
(জন্ম 27 শে মার্চ 1914 … মৃত্যু 28 শে জানুয়ারী 1985)
বাংলা সিনেমার আলোচনা সবসময় ঘোরাফেরা করে সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক এই তিন পরিচালকের মধ্যে। সেটা বাঙালীর অবিদ্যা অজ্ঞতা। মূলধারার চলচ্চিত্র পরিচালকদের ব্রাত্য রেখে দেওয়া হয়েছে চিরকাল। আজ বলব যে বরেণ্য পরিচালকের কথা তিনি মূলধারার ছবি করেই শিল্প নৈপুন্নতার ছাপ রাখেন।মূলধারার রোম্যান্টিক ছবি কতটা শৈল্পিক হতে পারে তারচেয়ে ভালো কেউ দেখাতে পারেননি।আর্ট ফর্ম রেখেও বক্সঅফিস হিট দিতেন। আজও দর্শক যার ছবির গানে দৃশ্যে মুগ্ধ। আইকনিক ছবি নির্মাতা। যার ক্যামেরায় আলোর কাজ হলিউড প্রশংসনীয়। তিনি হলেন অজয় কর। নামটা বলতেই মনে পড়ে যায় জিঘাংসা,গৃহ প্রবেশ,সাজঘর,বড়দিদি হারানো সুর,সপ্তপদী,সাত পাকে বাঁধা,দত্তা,অতল জলের আহ্বান,বিষবৃক্ষ অজস্র ছবি।
কিন্তু এর আগে ক্যামেরা ম্যান হিসেবে চারু রায় পরিচালিত ‘পথিক’ ছবিতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন অজয় কর।তারপর চিত্রগ্রাহক রুপে শকুন্তলা,পাষান দেবতা,চন্দরশেখর,ভুলি নাই প্রভৃতি ছবি। তাঁর দক্ষতায় কানন দেবী মুগ্ধ হয়ে তাঁর শ্রীমতী পিকচার্সে অজয় করকে সহকারী পরিচালক রূপে আনেন। তবে এই শ্রীমতী পিকচার্স প্রোডাকশান হাউসের কোনো পরিচালকের নাম থাকতনা।সব্যসাচী ছদ্মনামে সব পরিচালকরা একসঙ্গে ছবি করতেন। সব্যসাচী গোষ্ঠীর ছবি যেমন মেজদিদি,বামুণের মেয়ে,অনন্যা। এরপর একক পরিচালক রূপে অজয় করের সাফল্য প্রথম থ্রিলার রহস্যের বিখ্যাত ছবি ‘জিঘাংসা’। এরপর চলল উত্তম সুচিত্রা অজয় কর যুগ। পাশাপাশি সৌমিত্র,সুপ্রিয়া,শর্মিলা,তনুজা,তন্দ্রা বর্মণ যার ছবিতে কাজ করেন।তবে তথাকথিত বক্সঅফিসের ছক ভেঙেই তিনি সাহসী ছবি ‘সাত পাকে বাঁধা’ বানান।যার জন্য সুচিত্রা সেন সেরা নায়িকা হন।অজয় কর জাতীয় পুরস্কার পান হারানো সুর,সপ্তপদী,সাত পাকে বাঁধা ও সৌমিত্র-নন্দিনী মালিয়া-সাবিত্রী অভিনীত মাল্যদান ছবিতে। অজয় করের শেষ ছবি মধুবন। ভিক্টর-তনুজা অভিনীত। 28 শে জানুয়ারী 1985 সালে অজয় কর প্রয়াত হন। জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে এসছি আমরা এই পরিচালকের তিনি তাঁকে নিয়ে চর্চা নেই। তপন সিনহা তাঁর আত্মজীবনী ‘মনে পড়ে’ তে লিখেছেন “ভাবতে অবাক লাগে আমাদের দেশে অজয় করের মতো চিত্রপরিচালককে নিয়ে আলোচনা হয়না।”তবে আজকাল সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে অজয় করের চলচ্চিত্র নিয়ে পড়ানো হয়।
এসব সিনেমার কথা তো থাকেই কিন্তু আজ দিলাম কিছু পারিপারিক মুহূর্তের অদেখা ছবি।ছবি সৌজন্যে অজয় করের একমাত্র কন্যা কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায়।
প্রথম ছবিটি অজয় করের, তুলেছেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মধুবন’ ছবির শ্যুটিংএর আউটডোরে।
পরের দুটি ছবি একান্ত পারিবারিক কন্যা কৃষ্ণার বিয়ের দিন। বিয়ে বাড়িতে স্বয়ং উপস্থিত মহানায়ক।ধুতী পাঞ্জাবি শাল গায়ে। অজয় কর বলতেন “উত্তমকুমারের মুখে সর্বদাই হাসি।এই হাসি দিয়েই বোধহয় উত্তম সমস্ত বাংলাদেশের তথা ভারতের মন জয় করেছে।সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে ওঁর মুখের এই হাসিটি সমান অক্ষুন্ন।ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি,শতাধিক ছবির এই জনপ্রিয় নায়ক শত শত বৎসর ধরে দর্শন-মনে বেঁচে থাকুন।”এই উত্তম-অজয়ের ছবিতে সে কথা প্রমাণিত।
তৃতীয় ছবিটি ‘পরিণীতা’ ছবির শ্যুটিং এ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়কে ডিরেক্ট করছেন।
অজয় করের প্রয়াণ দিবস নিয়ে ইন্টারনেটে অনেক তথ্যপ্রমাদ আছে এখানে সঠিক তারিখ দেওয়া হল অজয় কর কন্যার সৌজন্যে। প্রণাম লেজেন্ড।
ছবি সৌজন্যে – অজয় কর কন্যা কৃষ্ণা কর মুখোপাধ্যায়ের পারিবারিক এলবাম
লেখা – শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়