
নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রমেশ সিপ্পির বোন। যার ফলে সে দাদাকে একটি নাটক দেখার জন্য মুম্বাইয়ে আমন্ত্রণ জানান। সেসময় সেই নাটকে এক আফ্রিকান চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছিলেন আমজাদকে রমেশ সিপ্পি। আর তখনই মনে হয়েছিলো ‘গাব্বার সিং’ চরিত্রটির জন্য তিনি সেরা।’
সেই শুরু আমজাদ ভিলেন যুগ,
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক খলনায়ক ছিলেন তিনি। রমেশ সিপ্পি পরিচালিত ‘শোলে’ ছবিতে ডাকাত সর্দার গাব্বার সিং চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছোন আমজাদ খান।
ব্রিটিশ ভারতের পেশোয়ারে জন্ম আমজাদ খানের ১২ নভেম্বর ১৯৪০, আবার অনেকের মতে, তিনি জন্মেছিলেন হায়দরাবাদে। পিতা জয়ন্ত খান অভিনয় করতেন সিনেমায়, ছেলেও বাবার পথেই হাঁটলো। মাত্র এগারো বছর বয়সেই আমজাদ খান শিশুশিল্পী হিসেবে হাজির হলেন পর্দায়, সিনেমার নাম ‘নাজনীন’। থিয়েটারে ভর্তি হলেন, এরমধ্যে চলছিল পড়াশোনাও।
১৯৭৩ সালে অভিনেতা হিসেবে ইন্ডাস্ট্রীতে অভিষেক হলো তাঁর, ‘হিন্দুস্তান কি কসম’ সিনেমায়। রাজ কুমার অভিনীত সেই চলচ্চিত্রে আমজাদ খান অভিনয় করেছিলেন পাকিস্তান এয়ারফোর্সের একজন পাইলট হিসেবে। কিন্তু কেউ মনে রাখেনি সে ছবি। আমজাদেরও ভাগ্য খোলেনি।
সব হিসেব বদলে দিল ১৯৭৫ সালে যখন শোলে মুক্তি পায়। গাব্বার সিং-এর মতো ভয়ঙ্কর খলনায়ক হিন্দি চলচ্চিত্র আগে দেখেনি, ভিলেন রোলে এমন অসাধারণ অভিনয়ও পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারেননি কেউ, আমজাদ খান তাই অবিস্মরণীয়। সিনেমার গাব্বারের ভয় দেখিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতেন মায়েরা।
ব্যক্তিজীবনে একদম নিপাট ভদ্রলোক ছিলেন আমজাদ। ১৯৭২ সালে বিয়ে করেছেন স্ত্রী শায়লাকে, তিন ছেলে মেয়ের জনক তিনি, কখনও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জলঘোলা হয়নি মিডিয়ায়। ছিলেন অ্যাক্টরস গিল্ডের সভাপতি, সবাই দারুণ শ্রদ্ধা করতো তাঁকে।
তাঁর ওজন অত্যাধিক বেড়ে যাচ্ছিল। হার্ট এ্যাটাকে মাত্র ৫১ বছর বয়সে মারা যান আমজাদ।
তবুও ‘কিতনে আদমি থে?’, ‘ইয়ে হাথ মুঝে দে দে ঠাকুর’, ‘জো ডর গায়া, সমঝো মর গায়া’ … এইসব কালজয়ী ডায়লগ দিয়ে বেঁচে থাকবেন আজীবন আমজাদ খান। মুকাদ্দার কা সিকান্দার থেকে সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি‘ তে কাজ করে সুনাম অর্জন করেন আমজাদ খান। অনুসন্ধান এ কালীরামের ফাটা ঢোল থেকে ‘লায়লা ম্যায় লায়লা’ গানের ড্রাম সবেতেই সেরা আমজাদ। একদম হার্ডকোর মুভি থেকে আর্ট মুভি সবেতেই সমান ছিলেন আমজাদ। তাই খলনায়ক হয়েও গাব্বার আজও নায়ক।
Written By – শুভদীপ ব্যানার্জী