
২৭ শে মার্চ ছিল কিংবদন্তি পরিচালক অজয় কর -র জন্মদিন। যিনি চমকপ্রদ অভিনব ছবি করেও প্রাপ্য সম্মান পাননি তার কাজের রক্ষনারেক্ষণ হয়নি।কিন্তু তাঁর ছবি গুলো আজও দর্শকের অসম্ভব ভালো লাগার। সেই স্বর্নযুগ থেকে আজও অজয় করের সপ্তপদী, সাত পাকে বাঁধা র মতো ছবি সবার প্রিয়। নব্বই দশকে এসব এত কেবল চ্যানেল ইউটিউব ডিভিডি ডাউনলোড ছিলনা। রোববারের বিকেল চারটে মানেই ছিল পরিবারের সবাই মিলে বসে কলকাতা দূরদর্শনে জমজমাট বাংলা ছবি দেখা। সব বাড়ি থেকে ভেসে আসত ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ কিংবা ‘তুমি যে আমার’ র সুর। যেমন ‘সপ্তপদী’ ছবিতে গানের ব্যবহার আধুনিক এবং চমকপ্রদ। গোটা ছবিতে প্লে-ব্যাক বলতে আছে “এবার কালী তোমায় খাব”, “অন দ্যা মেরি গো রাউন্ড”, “ওথেলো-র অংশবিশেষ” (গান নয়) উৎপল দত্ত এবং জেনিফার ক্যান্ডল্ “ওথেলো” অংশে উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেনের জন্য অসাধারণ স্বরদান করেছেন। এবং দুটি ভার্সনে “এই পথ যদি না শেষ হয়। “হেমন্ত-সন্ধ্যা ও একক সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ‘অন দ্যা মেরি গো রাউন্ড’…করতে সুচিত্রা সেন যে মাপের অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন তা কোন হলিউড অভিনেত্রীর চেয়ে কম নয়। একজন পাবনার মেয়ে এই উচ্চতায় অভিনয় করতে পারে তা শ্রীমতী সেন প্রমাণ করেছেন রিনা ব্রাউন চরিত্রে। সুচিত্রার লিপে এই গান গেয়েছিলেন স্যুজি মিলার। উত্তম কৃষ্ণেন্দুর কলেজ জীবন ও তারপরের জীবন দাড়ি লুকে দুধরনের অভিনয়ে কি অসাধারন। ওদের জুটির রোম্যান্টিক ছবির শীর্ষে এই ছবি। কিন্তু তখন সুচিত্রা উত্তমের মধ্যে ছিল দ্বন্দ্ব প্রতিযোগিতা কিছুটা মন কষাকষি চলছিল ওদের জুটির অভিনয় বিরতি। অজয় কর দুজনকে এক করে ছবি বানানোর অসাধ্য সাধন করে। কিন্তু ছবিতে দেখলে কেউ বুঝবে সেকথা! পারস্পরিক শ্রদ্ধা ভালোবাসা ছিল ওঁদের প্রতিযোগিতা মালিন্যর অনেক উপরে। ছবি বিশ্বাস ও ছায়া দেবীর অনবদ্য অভিনয়।
সর্বকালের রোম্যান্টিক হিট ছবি যা চিরআধুনিক, যা দেখায় ধর্ম ও ভালোবাসার লড়াই ও অসাধারন অভিনয় চিত্রনাট্য ক্যামেরা এবং পরিচালনা। সেই ছবির পরিচালক তথা বিখ্যাত চিত্রগ্রাহক অজয় করের জন্ম ১৯১৪ সালের ২৭ মার্চ, কলকাতায়। বাবা ডা. প্রমোদচন্দ্র ছিলেন রেলের ডাক্তার, মা সুহাসিনী। বাবার কাজের সুবাদে অজয় কর বালক ও কিশোর বয়সে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। আসল নাম ছিল অচ্চিদানন্দ। অনেকেই ভুলে গেছেন হয়তো তাই একটু স্মরণ করিয়ে দিলাম।
প্রণাম কিংবদন্তি।
অজয় করের ‘সপ্তপদী’ উত্তম সুচিত্রার ‘সপ্তপদী’ বাঙালীর আইকনিক প্রেমের ছবি। তাই এই ছবির নামানুসারে বাঙালী খাবারের রেস্তোরা চালু করেছেন শেফ রঞ্জন বিশ্বাস রেষ্টুরেন্ট ‘সপ্তপদী’। পূর্ণদাস রোড, দক্ষিন কলকাতায়। যেখানে বাজে শুধু উত্তম-সুচিত্রার গান সঙ্গে নিখাদ বাঙালী কব্জি ডুবিয়ে খানাপিনা। একজন পরিচালকের কাজ এতটাই আধুনিক আজও।
লেখক – শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়