এয়ারটেলের সঙ্গে জুটি বাঁধল হইচই। হইচই-এর যে কোনো ওয়েব সিরিজ, তা সে দুপুর ঠাকুরপো হোক বা হ্যালো কিংবা চরিত্রহীন, এখন থেকে যেকোনো এয়ারটেল গ্রাহক এয়ারটেল টিভিতে দেখতে পাবেন কোনো রকম হইচই সাবস্ক্রিপশন ছাড়াই! খবরটা এয়ারটেল ব্যবহার করা মানুষের কাছে নিশ্চয়ই ভীষণ আকর্ষণীয়! কিন্তু একটু তলিয়ে যদি দেখা যায় তবে কিন্তু একটা অন্য লড়াই চোখে পড়বে খুব সহজেই! রিলায়েন্স জিয়ো কানেকশন ভারতবর্ষে একটা অদ্ভুত বিপ্লব এনে দিয়েছে বেশ এক দুটো বছর হলো। টেলিকমের বাজারে তাদের ব্যাপক রমরমাতে কোথাও একটা গিয়ে মার খেয়ে গেছে এয়ারটেলের মতো টেলিকম সংস্থাগুলো। এয়ারটেল এর আগেও গ্রাহক টানার জন্য উইন্ক মিউজিক নামক অডিও কনটেন্ট অ্যাপের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল, এখন তালিকাতে নতুন যোগ হলো হইচই। কনটেন্ট-এর মায়াজালে মন ভুলিয়ে এটা কী তবে গ্রাহক টানার নতুন স্ট্র্যাটেজি এয়ারটেলের! এই প্রশ্ন থেকেই যায়। অন্যদিকে আর একটা বেশ কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল হইচই-এর এই পদক্ষেপ।
হইচই নিজের সাবস্ক্রিপশনের মধ্যে দিয়ে গ্রাহককে ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন করতো। বেশ চলছিল, হঠাৎই এয়ারটেলের সঙ্গে এই জুটি বাঁধার পর থেকে কিন্তু এয়ারটেল গ্রাহকরা সাবস্ক্রিপশনের মূল্য ছাড়াই বহালতবিয়তে এয়ারটেল টিভিতে উপভোগ করতে পারবে তাদের কনটেন্ট। পেড সাবস্ক্রিপশন-এর ভিত্তিতে তৈরী একটা সংস্থা তাতে হয়তো একটা অংশভাগ টাকাই পাবে। তখন এই প্রশ্নও উঠে আসে, তবে কী যথেষ্ট ব্যবসা করতে অক্ষম পেড সাবস্ক্রিপশন-এর ভিত্তিতে চলা ভিডিও কনটেন্ট প্রোভাইডার সংস্থাগুলো? আর তাই-ই টেলিকম সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে হলো বাঙলার সব থেকে বিখ্যাত ওয়েব ভিডিও কনটেন্ট মেকার একটি সংস্থাকে!
এবার একটু নজর করা যাক ন্যাশনালি বিখ্যাত কিছু কনটেন্ট প্রোভাইডার সংস্থার দিকে, হতেই পারে টি.ভি.এফ বা অ্যারের মতো সংস্থা, যারা সরাসরি ইউটিউব এর মাধ্যমে বিনামূল্যে ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন করছে উপভোক্তাকে। না কোনো সাবস্ক্রিপশনের টাকা খরচ, না কোনো টেলিকমের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হওয়ার ঝঞ্ঝাট! আর তাদের কনটেন্ট কিন্তু বেশ ভালো রকম আকর্ষণ করছে দর্শকদের।
তাহলে এখন আসল কথাটা হলো, কোনদিকে যাচ্ছে এই ভিডিও কনটেন্ট প্রোভাইডার সংস্থা গুলোর ভবিষ্যত? অথচ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অধিকাংশ এই জাতীয় সংস্থা আজ টেলিকম কোম্পানির শরণাপন্ন হয়েছে এবং হচ্ছে।
দর্শক টানতে গেলে যে কেবল সফ্ট পর্ন বা ক্ষণস্থায়ী কমেডি কনটেন্ট তৈরী করলে চলে না, তা তো প্রমাণ করে দিয়েছে ইন্টারন্যাশানাল নেটফ্লিক্স-এর মতো সংস্থা। তাদের সাবস্ক্রিবসান মূল্য যথেষ্ট পাওয়ার জন্য কোনো টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতেও হয় নি। অন্যদিকে যদি দেখা যায়, টি.ভি.এফ বা অ্যারে যে ভিডিও কনটেন্ট ইউটিউবে বিনামূল্যে পরিবেশন করছে, তার বিষয়বস্তু কিন্তু মানুষের কাছে অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য।
আসলে জীবনের গল্প বলতে গেলে যে কেবল যৌনতা বা ভীষণভাবে ক্ষণস্থায়ী কোনো অনুভূতির আশ্রয় নেওয়া ঠিক নয়, সেটা কোথাও গিয়ে বোঝা উচিত অধিকাংশ পেড সাবস্ক্রিবসান-এর উপর চলা অথচ হঠাৎই ফ্রী কনটেন্ট প্রোভাইড করতে চাওয়া সংস্থা গুলোর। অনলাইন সাবস্ক্রাইব ভিডিও কনটেন্টের ভবিষ্যত আর কিছুই না, তার বিষয়বস্তু ও জীবনের ছবি কতটা সহজ করে অথচ গভীরতায় পরিবেশন করতে পারবে তার উপরেই দাঁড়িয়ে আছে; তার জন্য আলাদা কোনো পদক্ষেপ বোধহয় প্রয়োজনীয় নয়।
কথায় আছে শিল্প সত্ত্বার কোনো বিকল্প হয় না, আর উঁচু মানের শিল্পের আলাদা করে কোনো পথ প্রয়োজন হয় না পপুলারিটি পাওয়ার, আর এই কথাটা যে কোনো সময় যে কোনো ক্ষেত্রেই সত্যি। পেড সাবস্ক্রাইব চ্যানেল গুলোর হঠাৎই ফ্রী কনটেন্ট পরিবেশনের দিকে এগিয়ে যাওয়া বোধহয় কোথাও গিয়ে একটা শিল্পহীনতার অসহায় অবস্থাটা স্পষ্ট করে দেয়।